মেহমানদারী বৃষ্টিতে চার সাংবাদিক -সাজ্জাদ বিন লাল

রাত ১২ টা। সুনসান নিরবতা, নিস্তব্ধ নির্জন শহরের প্রশস্ত রাস্তা। আকাবাকা রাস্তা তো নয় যেন অজগর সাপ। নির্জন রাত আর করোনা পরিস্থিতির কারণে রাস্তা ফাঁকা, নয়তো জনমানব পাওয়া যায় সারা রাত পর্যন্ত। এদিকে আকাশে চাঁদ মামার নেই।
এমনি ক্লান্তিময় ভয়ানক ভুতুরে রাতে শহরের পথ পারি দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা ধরে গ্রামের দিকে চলেছেন ২ টি মোটরসাইকেল যোগে (নমসসা) নামে চারজন সাংবাদিক। চলছে তো চলছেই, হঠাৎ আচানক ভাবে একটি মোটরসাইকেলের হেড লাইট অফ হয়ে যাওয়ায় মোবাইল ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে চলেছে আপন গতিতে, আর পিছনে অন্য সাইকেলের লাইটে সামান্য দেখা যায়।
সবাই সবার মত গল্পগুজবে চলেছে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য। আবার হলো আরেক কাণ্ড, যে মোটরসাইকেল মোবাইলের লাইটে চলছে সেটা আচানক ভাবে ব্যাটারি ডাউন হয়ে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। একেই বলে বিপদের পর আরেক বিপদ। নিরুপায় হয়ে রয়েছেন তারা। বড় সাংবাদিক বলেন তোমরা তিন জন এক সাইলে করে চলে যাও আর আমি শহরে পরিচিত বাসায় থেকে পরের দিন না হয় বাড়ি যাব।
মেজো এবং সেজো সাংবাদিক বলেন, না তা হয় না। প্রয়োজনে সারা রাত হেঁটে হেঁটে চারজন বাড়ি যাবো। উপায় কি হবে বুঝে ওঠার আগেই একটা ট্রাক দেখতে পেয়ে সবার মনে শান্তি ফরলো যে কোন একটা উপায় হবে। কিন্তু না হলো না কারণ তাদেন কাছে সাহায্য করার মত কিছু ছিলো না।
পরে আরেকটা ট্রাক এলে একটা রশি দিয়ে যায়, অবশেষে এক সাইকেলের সাথে অন্য সাইকেল বেঁধে এক সাইকেলে তিন আর চোখ বিহীন সাইকেল আরেকজন এভাবে চললো কিছুক্ষণ।
হাঠাৎ হলো আরেক কাণ্ড মাঝ পথে আসতেই মেহমানদারী বৃষ্টি আরম্ভ হলো। কোনমতে একটি দোকানের বারান্দায় আশ্রয় হলো, এমন সময় পাহারারত মুরুব্বি বাঁশি তে পি পি পিপ করে চার জনের কাছে আসলেন। তখন একজন রসিকতার নুরে বলে উঠলেন “চাচা বিড়ি দেন, শরির ঠাণ্ডা হয়ে গেছে বিড়ি খামু”।
চাচা মিয়া সাত-পাঁচ না ভেবেই বিড়ি দিলেন এবং বললেন তোমরা বিড়ি খাওয়া ঠিক না, কি বা কেনো একথা বললেন তাতে কারো কর্ণপাত নেই। পরে চাচা মিয়া আবার নিজেই বললেন সময় অনেক কিছু করতে হয়। কারণ পরিস্থিতি তা করতে বাধ্য করে, কত বড় বড় অফিসার ও রাতের বেলা আটক হলে আমার কাছ থেকে বিড়ি নেয়।
মেহমানদারী বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। থামছে না, মনে হচ্ছে আকাশের বড্ড কষ্ট তাই……..। মেহমানদারীর মেহমানি করতে সামান্য বিরতি নিলে আবার শুরু হয় পথচলা। অবশেষে ছড়া হলে বড় সাংবাদিকের সাইকেলের রশি (দড়ি) রাতের থাকার জায়গা হলো তাঁর শ্বশুড় বাড়ি।
আবার শুরু হলো তিন জনের যাত্রা, ছোট সাংবাদিককে তাঁরা দুইজন নামিয়ে দিয়ে সবাই সবার মত বাড়ি চলে গেলো এদিকে মেহমানদারি বৃষ্টি থেমে গেলো। ছোট সাংবাদিক বাড়ি এসে দেখলো খাবার ঘর তালা দিয়ে সবাই ঘুমে ধুম- সে ও একটা আপেল খেয়ে দিলো সেই রাতে ঘুম।