পাকিস্তানে তৈরি যে বল দিয়ে বিশ্বকাপ খেলবেন মেসি-নেইমাররা
![](https://habiganjersangbad.com/media/2022/11/IMG_20221116_100729.jpg)
হবিগঞ্জের সংবাদ,
স্পোর্টস ডেস্কঃ ফুটবলের মহাযজ্ঞ বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন চলছে। অংশগ্রহণকারী ৩২ দলই তাদের স্কোয়াড চূড়ান্ত করেছে। কাতারে প্রস্তুত সব স্টেডিয়াম।
তবে সবার আগেই প্রস্তুত ছিল কাতার বিশ্বকাপের ফুটবল। ৫ মাস আগেই বিশ্বকাপ ম্যাচের জন্য বলগুলো তৈরি করে ফেলেছে আয়োজক দেশটি।
চলতি বছরের মার্চের শেষে এ বলের উন্মোচন করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিন।
এ বলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আল রিহলা’। এটি আরবি ভাষার শব্দ। যার অর্থ ভ্রমণ, যাত্রা।
যে বল নিয়েই দীর্ঘ এক মান কাড়াকাড়ি করবেন ৩২ দলের সাড়ে তিনশ’র বেশি খেলোয়াড়, সেই ‘আল রিহলা’র বিষয়ে জানতে কৌতূহলী ফুটবলপ্রেমীরা।
কেমন গুণমান সম্পন্ন হবে সে বল? এর গতি হবে কেমন? এর প্রস্তুতকারক কোন দেশ? কোন কোম্পানির বল নিয়ে মাতবেন মেসি-নেইমাররা?
ফিফার দাবি, বর্তমানের গতিময় ফুটবলের সঙ্গে তাল মেলালোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই তৈরি করা হয়েছে বলটি। এর গতি আগের সব আসরের চাইতে বেশি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে যত বল তৈরি হয়েছে তার চেয়ে এটি বাতাসে বেশি গতিতে ছোটে।
যথারীতি এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। আর বলটি তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে। বলগুলো তৈরি হয়েছে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর শিয়ালকোটের একটি কারখানায়। সেখানে ফরওয়ার্ড স্পোর্টস নামের প্রতিষ্ঠানের কারখানায় তৈরি হয়েছে বল। প্রতি মাসে এই কোম্পানি ৭ লাখ ফুটবল বানায়।
জানা গেছে, রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘টেলস্টার ১৮’ বলও তৈরির স্বত্বও পেয়েছিল পাকিস্তানের এই প্রতিষ্ঠান।
‘আল রিহলা’ প্রসঙ্গে ফরওয়ার্ড স্পোর্টসের ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান মাসুদ পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য নিউজকে জানিয়েছিলেন, এবারের বিশ্বকাপের বলটি খুবই বেশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং দ্রুতগামী। এই বলে ব্যবহৃত ২৫ শতাংশ উপাদান টেকসই এবং রি-সাইকেল করা উপাদান দিয়ে তৈরি। কাতারে বিশ্বকাপে ৩০০০ ফুটবল ব্যবহার করা হবে, যার মূল্য ৮ মিলিয়ন ডলার। বলটির ওজন ৪২৫-৪৪৫ গ্রাম, এটি আকারে ৬৮.৮ সেমি থেকে ৬৯.৩ সেমি পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বকাপের ফুটবল হাতে সেলাই করা হতো। তবে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে থার্মোস বাইন্ডিংয়ের বল ব্যবহার করা হয়। এরপর রাশিয়া বিশ্বকাপেও একই ধরনের বল ব্যবহার করা হয়। এবারের বিশ্বকাপ বলগুলোও একইভাবে তৈরি।
‘আল রিহলা’র ব্যবহার করা হয়েছে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি। বলটিতে থাকছে ‘সিআরটি কোর’ এবং স্পিডশেল। যা ভিএআরকে আরও আধুনিক করে তুলবে। এতে নির্ভুল ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা পাবেন রেফারিরা।
শিয়ালকোট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসসিসিআই)- এর সিনিয়র সহসভাপতি শেখ জোহাইব রফিক শেঠি জানান, আল রিহলা বলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি পরিবেশবান্ধব।এই বল বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব ও পুনর্ব্যবহৃত উপাদান। এতে কোনো দ্রাবক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি। বরং পানিভিত্তিক এমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিবেশ দূষিত করবে না। এই বল বিশ্বসেরা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
বলের সেলাইয়ে গত বিশ্বকাপের টেকনলজির সহায়তা নেওয়া হয়েছে বলেন জানান রফিক।
তার ভাষ্য, ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বকাপের ফুটবল হাতে সেলাই করা হতো। তবে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে থার্মোস বাইন্ডিংয়ের বল ব্যবহার করা হয়। এরপর রাশিয়া বিশ্বকাপেও একই ধরনের বল ব্যবহার করা হয়। এবারের বিশ্বকাপ বলগুলোও একইভাবে তৈরি।
বলা হচ্ছে, অন্যান্য আসরের বলগুলোর তুলনায় ‘আল রিহলা’ বাতাসে সবচেয়ে বেশি গতিতে ভাসবে । পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ে বলটি ধরতে গিয়ে বেগ পেয়েছেন গোলকিপাররা। তারা আঠালো আবরণের অনুভূতি পেয়েছেন।
পাকিস্তানে তৈরি হলেও বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, প্রতীকী নৌকা ও তাদের পতাকার রংয়ের মিশেলে তৈরি করা হয়েছে ‘আল রিহলা’ নামের বলটি।
যেখানে ২০টি প্যানেলের ডিজাইন ব্যবহার করেছে অ্যাডিডাস। এগুলো সব ত্রিভুজাকৃতির, যা মধ্যপ্রাচ্যের ‘ধো’ নৌকার প্রতীক। প্যানেলের দুই দিক বিভিন্ন রংয়ে আবৃত। যা কাতারের পতাকা ও আরবের ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাককে ফুটিয়ে তুলেছে।