দেশজুড়ে

লিবিয়া ফেরত স্বামীকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন পারভীন

প্রিন্ট করুন


নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ
‘লিবিয়া থেকে ফেরত আসা অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আজ আমি নি:স্ব। স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়িটি বন্ধক দিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে থাকি। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে চারলাখ টাকা হয়েছি ঋণ। ফলে ঋণের চাপে এখন আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। তাই এতিম তিনছেলে মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার নারায়ণপুর মধ্য পাড়ার বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী বিধবা পারভীন আক্তার (৪০) বুধবার বিকেলে এভাবেই উপরোক্ত কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লিবিয়া ফেরত স্বামীকে হারিয়ে অসহায় পারভীন আক্তার পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এ প্রতিবেদকে বলেন, ২০১০ সালের শুরুর দিকে আমার স্বামী মো. লিটন মিয়া (পিতা মৃত: আবদুল মালেক) ঢাকার বনানীর একটি কোম্পানীর মাধ্যমে লিবিয়ার বেনগাজির আলিসখাম নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে লিবিয়ায় যান। ২৫ হাজার টাকা মাসে বেতন দেয়ার কথা বলে নেয়া হলেও, লিবিয়ায় যাওয়ার পর আমার স্বামীকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হত। কোম্পানীটিতে প্রায় এক হাজার ২০০ বাঙালি শ্রমিক তখন কাজ করত। এভাবে প্রায় দেড় বছর কেটে যাওয়ার পর ২০১১ সালের শুরুতে লিবিয়ায় যুদ্ধ (গণবিদ্রোহ) শুরু হয়। যুদ্ধের শুরুতেই লিটনের কোম্পানীতে ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে সব লুটপাট করে নেয় লিবিয়ার বিদ্রোহীরা।
এরপর প্রাণ বাঁচাতে লিটনসহ প্রচুর বাঙালি জাতিসংঘের সহায়তায় সেখান থেকে পালিয়ে মিসর হয়ে ২০১১ সালের ১৩ মার্চ দেশে ফিরে আসেন। এসময় প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়া লিটন বাংলাদেশ বিমানবন্দরে নেমেই জ্ঞান হারান। পরে তাকে রেডক্রিসেন্টের কর্মীরা মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে অর্তি করেন। এরপর প্রায় ছয় মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিটন ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মারা যান।
এই ছয়মাস ধারদেনা করে স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাড়ি বন্ধকসহ নানাভাবে দরিদ্র পারভীন আক্তার চারলাখ টাকা ঋণ করেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর গত প্রায় ১১ বছর ধরে তিনটি এতিম বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন অসহায় বিধবা পারভীন আক্তার।
পারভীন আক্তার বলেন, স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ডেকে নিয়ে লিবিয়া ফেরত শ্রমিকদের স্বজনদের হাতে ৫০ হাজার টাকা করে চেক তুলে দেন। আমিও সেই ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু এরপর আজ পর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে আর কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তবে নবীনগর পৌরসভার সাবেক মেয়র মাইনুদ্দিন মাইনু স্যারের দয়ায় আমি পৌর কার্যালয়ে মাস্টার রোলে ৬ হাজার টাকা মাসিক বেতনে পিয়নের একটি চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু মাইনু স্যার ২০১৯ সালে মেয়র পদে পরাজিত হওয়ার পর আমার চাকরিটাও চলে যায়।
পারভীন আক্তার জানান, পাওনারদের ঋণের প্রচন্ড চাপে পড়ে ইতিমধ্যে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে একাধিকবার আর্থিক সহায়তা পাওয়ার আবেদন করেও কোন সাড়া পাইনি।
তাই তিনটি এতিম বাচ্চাকে নিয়ে বাকী জীবন বেঁচে থাকার জন্য আমার যেকোন একটি সন্তানকে চাকরি দেয়াসহ আমার অসহায় পরিবারটিকে বাঁচাতে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার সানুগ্রহ সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
এ বিষয়ে নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাস জানান,পৌরসভার মিটিংয়ে সকলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েই আমাকে কাজ করতে হয়। আমার একা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। নতুন করে তাই কাউকে নেয়ার আপাতত কোন সুযোগ নেই।’


Related Articles

Back to top button
Close