সাবাস বাংলাদেশ – ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন
মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার, সম্পাদক ও প্রকাশক-হবিগঞ্জের সংবাদ।
বানিয়াচং -আজমিরিগঞ্জের বীর ছাত্র-জনতাকে অভিবাদন আপনারা দেশবাসীর সাথে মিলে রক্ত দিয়ে-জীবন দিয়ে এদেশের নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসককে পরাভূত করেছেন । ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে যা’রা ছাত্র-জনতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই গণজাগরনকে একটি যৌক্তিক পরিনতিতে নিয়ে এসেছেন । বাংলাদেশ নামক লাইনচ্যুত ট্রেনটি সঠিক লাইনে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । এখন আমাদের প্রয়োজন স্ব স্ব স্থানে থেকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশ পুর্ণগঠনে অংশগ্রহন করা ।
আওয়ামী-বাকশালী শাসকেরা প্রচার করতো, বাকশালীরা ক্ষমতা থেকে পতিত হলে নাকি দেশে হত্যাকাণ্ড চলবে এবং পাচঁ থেকে সাত লক্ষ লোককে হত্যা করবে । কিন্তু এদেশের ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলসমূহ এটা মিথ্যা প্রমান করেছে । টানা পনের বছর ছয় মাস বাকশালী সরকার দেশে গুম,খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল, মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের জেলে পুরেছে ও হয়রানী করেছে, ফর্মায়েসী রায়ে অনেক আলম ওলামা ও জাতীয় নেতৃত্বকে হত্যা করেছে । আলেম সমাজের সমাবেশে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হত্যার এক উৎসবে মেতে উঠেছিল, ঐদিন শাপলা চত্বরে কত কিশোর, যুবক,বৃদ্ধ খুন হয়েছে আজও তা’র হিসাব পাওয়া যায়নি । এই সাড়ে পনের বছরে নারী ধর্ষণের মহা উৎসব চলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা মোমবাতি জ্বালিয়ে ধর্ষণের সেন্সুরী উদযাপন করেছে । ছাত্রলীগের মেয়েরা ফিরিস্তি দিয়েছে কত শত নিরীহ ছাত্রীকে তা’রা আওয়ামী-বাকশালী নেতাদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করেছে । এসব ঘটনা নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় আসলেও স্বৈরশাসক হাসিনা ওয়াজেদ ছিল নিশ্চুপ । দ্রব্য মূল্যের সীমাহীন উর্ধগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল কিন্তু আওয়ামী সরকারের মদতপুষ্টে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ, এই দুর্নীতিবাজরা লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে । বাকশালী সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরন করে নির্বাচনকে একটি প্রহসনে পরিনত করেছিল । এমন একটা পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ বিরোধীদল সমূহ হামলা-মামলা মাথায় নিয়ে যখন দীর্ঘ আন্দোলনরত ছিল তখন ছাত্রদের ন্যায্য দাবী কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হল । জবরদখলকারী আওয়ামী সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল স্তর নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে ছাত্রদের উপর হায়নার মত ঝাপিয়ে পরে এবং তা’দের পেটুয়াবাহিনী দ্বারা নির্বিচারে ছাত্রদের যখন হত্যা করে চলেছিল তখন বাংলাদেশের মানুষ তা’ আর মেনে নেয়নি । বিএনপিসহ বিরোধীদল সমূহ ছাত্রদের এই আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে এগিয়ে আসে, ছাত্র-জনতার এই মহা বিপ্লবে ফ্যাসিষ্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী-বাকশালী সরকারের পতন ঘটে এবং স্বৈরশাসক হাসিনা ওয়াজেদ তা’র বোনকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় । হাসিনা ওয়াজেদের দোসররা কেউ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পরে আর অনেকেই বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অন্যরা গা’ঢাকা দিয়ে আছে ।
উনিশ জুলাই দিনে বানিয়াচঙ্গে ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ পুলিশের সহায়তায় বানিয়াচঙ্গের বিএনপির বর্ষিয়ান নেতা মরহুম নুরুল ইসলাম, বিএনপির সাবেক উপজেলা সাধারন সম্পাদক ও বার বার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারিস উদ্দিন খান ও উপজেলা যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহিদ মুরাদের বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর করে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এবং ওয়ারিস উদ্দিন খানের বড় ছেলে ওয়াসিম ও মুরাদের ছোট ভাই ফজলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ।
৫ আগষ্ট বানিয়াচঙ্গ উপজেলা সদরে হাজার হাজার মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের লক্ষ্যে মিছিল বের করে । ইতিপূর্বেও তা’রা যখন মিছিল বের করতো তখন গ্রামের কেন্দ্রবিন্দু শহীদ মিনারে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারগন বন্দুক, রামদা’, কিরিচ, হকিস্টিক ইত্যাদি ছাত্র-জনতার মিছিলে আক্রমন করতে জমায়েত হতো, ঐদিনও তা’রা সশস্ত্র অবস্থায় শহীদ মিনারে অবস্থান করছিল, কিন্তু হাজার হাজারছাত্র-জনতার মুখোমুখি হওয়ার পর টিকতে না পেরে তা’রা স্থানীয় বানিয়াচঙ্গ থানায় প্রবেশ করে । সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে ছাত্র-জনতা থানা ঘেরাও করলে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষন করে এতে আটজন শহীদ হওয়ার পর জনতা থানায় আগুন লাগিয়ে দেয় ।
আমি ঢাকাতে ছিলাম, রাত দশটা পয়তাল্লিশ মিনিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশ পেলাম বানিয়াচং যাওয়ার জন্য । তিনি জানতে পেরেছেন বানিয়াচং থানার পরিস্থিতি নাজুক, নয়জন ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে, থানাতে আগুন দেয়া হয়েছে, থানার ওসি আহত । দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাত্র-জনতাকে শান্ত করতে হবে । বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন উনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্র-জনতাকে নিবৃত্ত করে । ইতিপূর্বে আমি আমাদের নেতাদের তিনবার পাঠিয়েছি ছাত্র-জনতাকে শান্ত করার জন্য কিন্তু তা’রা শান্ত হয়নি এবং থানা ঘেরাও থেকে প্রত্যাহার হয়নি, তা’রা আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং ওসিসহ গুলিবর্ষনকারী পুলিশ সদস্যদের তা’দের জিম্মায় ছেড়ে দেয়ার দাবীতে অটল থাকে । ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ বানিয়াচং গিয়ে ছাত্র-জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে কিন্তু জনতা তা’মেনে নেয়নি । পরবর্তিতে জিকে গউছের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাত্র-জনতাকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে জনতা একজন ছাড়া অন্যদেরকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়, এবং এস আই সন্তুশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে । রাত দেড়টার সময় থানায় অবস্থিত পুলিশদেরকে সেনাবাহিনী যখন গাড়িতে তোলার প্রস্তুতি নেয় তখন ছাত্র-জনতা সন্তুশ নামক এস আই-কে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার পর এলাকা ত্যাগ করে । আমি রাত সোয়া তিনটায় বাড়ি ফিরি ।
পরদিন স্থানীয় এল আর হাই স্কুল মাঠে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতে সাতজন শহীদের জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয় এবং ছাত্র-সমন্বকদের অনুরোধে আমিই ছিলাম একমাত্র বক্তা । আমি আমার বক্তৃতায় এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কোথাও কেহ আইন হাতে না তোলার আহ্বান জানাই । আমি আরও বলি এখন পুলিশ নাই, তাই আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ মহল্লার শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিতে হবে । জানাযার পর আমি আমার এলাকার তিনজন শহীদের লাশের সাথে এলাকায় পৌছাই এবং একে একে তিনজনকে দাফন করি । তিনজনকে দাফন করার পর শুনতে পাই গতরাতে নিহত এস আই শন্তুসের মরদেহটি কে বা কাহারা পায়ে রশি বেধে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে । এই সংবাদটি পাওয়ার সাথে সাথে আমি ঐএলাকায় বসবাসরত ছাত্রদল নেতা সুয়েম এবং বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব লুৎফুর রহমানকে মরদেহটি গাছ থেকে নামানোর ব্যবস্থা নিতে বলি, উনারা তৎক্ষণাৎ লাশটি গাছ থেকে নামানোর ব্যবস্থা করেন । তখন আমি চতুর্থ শহীদের দাফনে শরীক না হয়ে আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান, সাদিক, লোকমান, সুয়েম ওদেরকে থানার সামনে থাকতে বলে আমি কামালখানী থেকে সেখানে এসে হাজির হই । থানার সামনে তখন শত শত মানুষ, আমি এসে জনাব লুৎফুর রহমানকে একটা ট্রলি আনতে বল্লাম এবং বল্লাম ট্রলিতে করে লাশটা আমরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবো । লুৎফুর রহমান বল্লেন ইউএনও এর সাথে উনার কথা হয়েছে ইউএনও উনাকে বলেছেন লাশ নেয়ার জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে কিন্তু জনগনের রোষানলে পরে কিনা এই ভেবে আসতে চাচ্ছেনা, আমি বল্লাম ইউএনও কে বলে দিন, সেনাবাহিনী লাশ নিতে আসলে কোন সমস্যা হবে না । তিনি ঐকথা ইউএনও কে জানানোর পরেও বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হল কিন্তু সেনাবাহিনী আসছেনা দেখে আমি বড় বাজার সভাপতিকে বল্লাম ইউএনও কে বলেন দ্রুত সেনাবাহিনী না আসলে আমরা ট্রলি এনে লাশ হবিগঞ্জে পাঠিয়ে দেবো, কারন তখন লাশের চারপাশে মানুষ ভীর বাড়ছিল । তখন লুৎফুর রহমান ইউএনওকে ফোন করার পর সেনাবাহিনীর দুইটি গাড়ি সাথে এম্বুলেন্স নিয়ে আসে । এস আই শন্তুসের লাশটি এম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেয়ার পর সেনাবাহিনী আমাকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করায় আমি জনতার উদ্দেশ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখি ।
আর্মি গাড়ির সাথে এম্বুলেন্সে এস আই সন্তুসের লাশটি পাঠানোর পর আমি অন্যান্য শহীদের বাড়ি তাদের পরিবারের সাথে দেখা করি এবং মাগরিবের পর আর একজন শহীদের জানাযা ও দাফনে শরীক হই ।
পরদিন আমাদের নির্বাচনী এলাকার আজমিরিগঞ্জ উপজেলায় যাই এবং বিএনপির হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দ ও আজমিরিগঞ্জ বাজারের লোকজনকে নিয়ে বাজার ও আশপাশের লোকজনকে অভয় দিয়ে সকলকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানাই ।
ঐদিন দুপুরে আমি সিলেট যাই, সেখানে ইবনে সিনা, নর্থইস্ট ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একুশ জন গুলিবিদ্ধ মানুষ চিকিৎসাধীন আছে । বানিয়াচঙ্গের প্রবাসী বিএনপি নেতা মোতালিব লস্করের মেয়ে সুলতানার নেতৃত্বে একটা নার্সেস টিম ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত আছে, এই টিম দুস্হজনের সেবা করে থাকে । তা’দের এই মহৎ কাজের বিষয়ে আগে থেকেই আমার সাথে যোগাযোগ রাখতো । আমি ইবনে সিনা হাসপাতালে রুগী দেখে এবং ডাক্তারদের সাথে কথা বলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলাম, সেখানে সুলতানাদের টিমে সাথে আলাপের পর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীদের দেখলাম ও তা’দের চিকিৎসা নিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারদের সাথে কথা বল্লাম । বন্দুকের পিলেট ইন্জুরী একজনের ছাড়পত্রে দেখলাম, রুগের স্থানে লিখা “হিস্ট্রী অব এসল্ট”। গান শট লিখা নাই, যার ফলে সরকারী সহযোগিতায় হয়তো তা’র অসুবিধা হতে পারে তাই রুগীর ছাড়পত্রে যেন আঘাতের সঠিক কারন লিখা হয় সেই ব্যাপারে ডাক্তার ও নার্সদের বলে আসি ।
পরের দিন শুক্রবার আমার হবিগঞ্জের পাশে নবীগঞ্জ রোডে আলমপুর আহত রুগীদের দেখতে যাওয়ার কথা এবং সেখান থেকে ইকরামে শহীদের জন্য আয়োজিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থাকার কথা । সন্ধ্যার পর শুনলাম আজমিরিগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের বদলপুর বাজার ও পাহাড়পুর বাজারে কে বা কাহারা দুইটা মোটরসাইকেল যোগে এসে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গেছে । রাতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সকাল বেলা আমি বদলপুর ও পাহাড়পুর হয়ে সনাতনধর্মী এলাকা করচা, কবিরপুর, তেলঘড়ি, হিলালনগর এবং মার্কুলী বাজার হয়ে বায়া নবীগঞ্জ আলমপুর যাব । এই উদ্দেশ্যে দুইটা মোটরসাইকেল নিয়ে আমজাল, সাদিক ও সুহেলকে সকাল আটটার মধ্যে আমাদের বাড়ি আসতে বলি ।
আমার সফর সঙ্গীরা আসার পর আমরা আজমিরিগঞ্জের পথে বদলপুর রওয়ানা দিলাম । ইতিপূর্বেও আমাদের বদলপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মোস্তফা, ইসুফ আলী, আহ্বায়ক আ. কাদির, হরে কৃষ্ণ, গৌঢ় দাস, কৃষ্ণ, গোপাল দাস, দিলু মেম্বার, বিধান, স্বপনসহ বদলপুর ইউনিয়নের আমাদের দলের সনাতনধর্মী নেতৃবৃন্দকে পাহাড়পুর বাজারে উপস্থিত থাকতে বলি । আমরা বদলপুর বাজারে সনাতন ধর্মীদের অভয় দিয়ে তা’দের পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে পাহাড়পুর বাজারে যাই, সেখানে প্রথমে বাজার কমিটির সভাপতি বাদল বাবুর দোকানে সভাপতিসহ বাজারের অনেক দোকান মালিকের সাথে আলোচনা করি তখন দোকানের ভিতর ও বাহিরে অনেক লোক জড় হয়ে গেলে তা’রা পাহাড়পুর বাজারের দূর্গা মন্দিরের সামনে এক সভার আয়োজন করে । সেখানে গিয়ে দেখি ছয়/সাত শত মানুষ সেখানে জড়ো । ঐ তাৎক্ষণিক সভায় আমি ছাড়াও বাজারের দোকান মালিক, স্কুল শিক্ষক এবং পাহাড়পুর বাজার কমিটির সভাপতি বক্তব্য রাখেন । আমরা সকলকে অভয় দিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলি এবং যেকোন বৈরী পরিস্থিতিতে আমাদের নেতাকর্মী তা’দের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে বলে আশ্বস্ত করি । অতঃপর আমি করচা, কবিরপুর, তেলঘড়ি, হিলালনগর হয়ে মার্কুলী বাজার এসে আসি এবং প্রতিটি স্থানে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানাই ।
মার্কুলী বাজার থেকে আলমপুর আসার পথে ফার্মের বাজারে এক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পতিত হই, আমার বা’পায়ের হাটুতে প্রচন্ড আঘাত লাগে, হাটা-চলায় অসুবিধা হচ্ছিল । খুড়িয়ে খুড়িয়ে জুম্মার নামাজ শেষে নির্ধারিত পাঁচটি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে রাত নয়টা নাগাত বাড়িতে আসি । পরদিন পা’ অনেক ফুলে যাওয়ায় এবং ব্যাথা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় চলে আসি ও এম আর আই করে দেখি হাঁটুর একটা হাড় টিবিয়ার পিছনের দিক খানিকটা ভেঙ্গে গেছে । তাই ডাক্তারের পরামর্শে এখন বিশ্রামে আছি ।
৫ আগষ্ট ৯জন মানুষের মৃত্যুর পর সাধারন মানুষের ক্ষোভের শিকার তিনটি স্থাপনা আক্রান্ত হওয়া ছাড়া বানিয়াচঙ্গে আর কোন অঘটন ঘটেনি বিশেষ করে ৬ আগষ্ট সকাল থেকে আজ ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন সামান্যতম সহিংসতা ঘটেনি । একদিন পর আজমিরিগঞ্জে চারটি ঘটনা ঘটে সবগুলোই ব্যাক্তিগত রেষারেষী থেকে ।
৫ আগষ্ট থেকে আজ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্র-জনতা বা তৎকালীন বিরোধীদল পক্ষ যে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে তাহা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে । ভিন্ন মত, দল ও ধর্মের জনগোষ্ঠীর প্রতি এদেশের মানুষের মহানুবতা এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে । অতঃপর প্রলয়ংকারী বন্যা এবং বন্যা মোকাবেলায় ছাত্র-জনতা ও দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ ভাবে ঝাপিয়ে পরা, যা’ ইতিহাসে এক নজিরবীহিন ঘটনা । এখন মানুষের এই গণচেতনাকে শানিত করে রাষ্ট্র সংস্কার সময়ের দাবী। লক্ষ মানুষের মত আমারও দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে প্রত্যাশিত নতুন দিগন্তের দিকে । সব শেষে সুকান্তের কবিতার একটি লাইন ” সাবাস, বাংলাদেশ – এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়”।
মোঃ শাখাওয়াত হাসান জীবন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবীদল বিএনপি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনপি।