দেশজুড়ে

বানিয়াচংয়ে থানা ঘেরাও করে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় মামলা

প্রিন্ট করুন

হবিগঞ্জের সংবাদ, অনলাইন ডেস্ক।

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ৫ আগস্ট থানা ঘেরাও করে উপরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে (৩৮) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা করেন। এতে ৫ থেকে ৬ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দে মামলার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে জড়ো হন কয়েক শ লোক। পরে তাঁরা একটি মিছিল নিয়ে বড় বাজার হয়ে থানার সামনে দিয়ে রওনা হন। পথে ঈদগাহ এলাকায় তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন, হাসপাতালে আরও ছয়জনসহ মোট নয়জন নিহত হন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে থানার সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে কয়েক হাজার মানুষ থানা ঘেরাও করেন। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় থানার ভেতরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-সহ পুলিশের ১৫ থেকে ১৬ সদস্য আটকা পড়েন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী আটকা পড়েন। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

৫ আগস্ট বানিয়াচং থানায় ক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে থাকা বেশ কিছু গাড়ি ভস্মীভূত হয়। ৬ আগষ্ট থানা ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে জেলা সদর থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করে রাখেন। এরপর মধ্যরাতে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছসহ দলটির বেশ কিছু নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লোকজন শুনছিলেন না। পরে ক্ষুব্ধ লোকজন রাত একটার দিকে সেনাবাহিনীকে প্রস্তাব দেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ও থানার এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে তাঁদের হাতে ছেড়ে দিতে। কিন্তু সেনাবাহিনী রাজি হয়নি। পরে সেনাবাহিনী জানায়, থানার ভেতরে ওই আওয়ামী লীগ নেতা নেই। পরে জেলা বিএনপি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে লোকজন শান্ত হন।

ওই দিন রাত ২টার দিকে থানার দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্য ও নেতাদের উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে ওঠানোর সময় এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে উপস্থিত লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে সবার সামনে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ নিয়ে বানিয়াচং বড় বাজার শহীদ মিনারের মাঠে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভোররাতে লাশ থানার সামনে এনে ফেলে রাখা হয়। পর দিন সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ লোকজন লাশ থানার সামনে একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। দিনভর হাজারো মানুষ লাশ দেখতে থানা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন।

এদিকে গাছে লাশ ঝোলানোর খবর পেয়ে ৬ আগস্ট বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। লাশের ময়নাতদন্ত হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
সুত্র:প্রথম আলো


Related Articles

Back to top button
Close