নরম হাতের কোমল ছোঁয়ার মাটির ঘর আজ কই

সাজ্জাদ বিন লালঃ
‘আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গ্রামেও। মাটির ঘর/ছনের ঘরের জায়গায় তৈরি হচ্ছে প্রাসাদসম অট্টালিকা। মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান। একটু সুখের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে। মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া ভার।
তারপরও মানুষ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণের সাথে সাথে পাকা দালান কোঠাই তৈরি করছেন। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। বেশিদিন আগের কথা নয়, প্রতিটি গ্রামে একসময় মানুষের নজর কাড়তো সুন্দর এ মাটির ঘর। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও খুবই শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এসব ঘর এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের বিবর্তনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ চিরচেনা মাটির ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে। অতীতে মাটির ঘর গরীবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত ছিল। এ ঘর শীত ও গরম মৌসুম আরামদায়ক তাই আরামের জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান ও মাটির ঘর তৈরি করে থাকতেন।
২৬ জুন শনিবার বিকেলে ভ্রামনবাড়ীয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার মুকন্দরপুর এর পশ্চিম সেজামুড়া সীমান্ত এলাকা ঘুরে ও স্থানীদের হতে জানা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিনত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হত। ১০-১৫ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় থড় অথবা টিনের ছাউনি দেয়া হত।
মাটির ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের তিন-চার মাসের অধিক সময় লাগতো। গৃহিনীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা একে তাদের নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তুলতেন।
এক সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার মাটির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। তবে বর্ষার সময় মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বেশি। ভুমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির ঘর শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়।
কিন্তু কালের আর্বতনে দালান-কোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মানছে সে চিরচেনা শান্তির নীড় ‘মাটির ঘর’। বিজয়নগর উপজেলার মুকন্দরপুর কম বেশি সব গ্রামেরই দেখা যেতো শান্তির নীড় ‘মাটির ঘর’ কিন্তু সে মাটির ঘর এখন আর চোখে পড়ে না।
বিজয়নগর উপজেলার মুকন্দরপুরের পশ্চিম সেজামুড়া গ্রামের সেই পুরোনো স্মৃতিভরা শান্তির নীড় মাটির ঘরে চোখ পড়লো, কথা হলো বাড়ির মালিক আলিম উল্লার সাথে ।
তিনি বলেন, বাবা ও দাদাদের সেই পুরোনো স্মৃতি ধরে রাখতে এখনো মাটির ঘর রেখে দিয়েছি। তবে যুগের সাথে তাল মেলাতে এখন অনেকে ইটের ঘর তৈরি করছে, তাই ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর।
পশ্চিম সেজামুড়া গ্রামের ফিরোজ মোল্লা জানান, ১৯৭১ সালে পূর্বে আমার মা গুদাম (মাটির ঘর) তৈরি করেন। যা এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড তাপদাহে বাড়ির লোকজন শান্তির পরশ হিসেবে আমাদের মাটির ঘরকে বেঁচে নেয়।
স্থানীয় রবিন জানান, মাটির ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের বিবরর্তনে অধিকাংশই মানুষ মাটির ঘর ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় অনেক লোকের বসবাসের জন্য ইটের ঘরকে প্রথম প্রচন্দের তালিকা নিয়ে আসছে।
তাইতো বলা যায়, লাগছে মনে আধুনিকতার ছোয়া না ঘুমাই না খাই- নরম হাতের কোমল ছোঁয়ার মাটির ঘর আজ নাই।