শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

রাত পোহাতে এখনও অনেক দেরি-সুজন মিয়া

প্রকাশিত হয়েছে -

হবিগঞ্জের সংবাদ,
২০০৮-সাল যাবো আমের দেশ রাজশাহী,সঙ্গী ষাটোর্ধ বয়সী বুড়ো নানা।সেখানে আমার ছোট খালার বাড়ী।আমাদের গন্তব্য রাজশাহীর চাবাই নবাবগঞ্জের নশিপুর গ্রাম। সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। রাতে কাপড়চোপড় গুছিয়ে প্রস্তুত হলাম। ভোরে বানিয়াচং থেকে রওয়ানা হবো রাজশাহীর উদ্দেশ্যে।পরদিন ফজরের নামাজ পড়েই নানাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম রাজপথে।সকাল ৬.৩০ মিনিটে বানিয়াচং বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজধানী ঢাকার দিকে আমাদের নিয়ে রওয়ানা হলো বাস অগ্রদূত। ইঞ্জিনের বুরবুর শব্দে চললো আমাদের বাস।শায়েস্তাগঞ্জ স্টপেজ ধরলো মিনিট কয়েক সময়। তারপর আবারও চললো আপন গতিতে।তখনকার সময়ে কিন্তু রাজশাহী যাওয়ার সরাসরি কোন বাস ছিলোনা।রাজধানী ঢাকা গিয়ে বাস পাল্টে পাল্টে যেতে হতো।আর এখনতো জেলা শহর থেকে সরাসরি যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।আওয়ামী সরকারের উন্নয়নে পাল্টে গেছে সড়কগুলোর অবস্থা। ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় এখন আর এতো কষ্ট করতে হয়না।যাই হোক দেশের উন্নয়ন নিয়ে না হয় আরেকদিন গল্প হবে।আমাদের বাস দুপুর ১.টায় রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ স্টেশনে নামিয়ে দিলো।সেখান থেকে মেঝো মামা আমাদের রিসিভ করে নিয়ে যান উনার বাসায়।খাওয়া দাওয়া গল্প করে বিদায় নিলাম মামার কাছ থেকে।আমরা এবার যাবো গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে রাজশাহীর বাস।লোকাল বাসে উঠে পড়লাম,মিনিট বিশেক পর লোকাল বাস আমাদের গাবতলী পৌঁছে দিলো। ২.৩০ মিনিটে রাজশাহীর গাড়ীতে উঠবো। গাবতলী বাস কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছি নানাকে নিয়ে,তখন ঘড়িতে ২.২০ বাজে, টিকেট কাটতে হবে।এমন সময় ঘটলো আজব এক ঘটনা।কোথা হতে মধ্য বয়সী এক যুবকের আগমন। বেশ লম্বাটে এবং কুচবরণ কালো চেহারা তার। নানাকে ঢাকাইয়া ভাষায় প্রশ্ন করলো ও কাকা কোথায় যাবেন আপনারা।প্রশ্নের জবাবে নানা রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার কথা বললেন।তখনই লোকটা একটা বাস দেখিয়ে বললো এই গাড়ীর কন্ট্রাক্টর আমি, আমরা ওইখানেই যাবো। টিকেট কাটতে হবে আসুন আপনি বৃদ্ধ মানুষ আপনাকে আগে গাড়ীর সিটে বসিয়ে দেই তারপর না হয় টিকেট দেবো। এসময় আমি নানাকে বারংবার নিষেধ করলাম।আসো নানা আমরা কাউন্টার থেকে টিকেট কাটি।কে শুনে কার কথা,নানা অবশেষে ওই লোকটার ফাঁদে পা দিলেন।আমাদের বাস সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজ পকেট থেকে দুটো টিকেট দিলো লোকটি।টিকেট বাবদ তাকে ৬০০ টাকা দেয়া হলো।নানাকে সালাম দিয়ে লোকটি বিদায় নিলো।এতোবড় গাড়ীতে আমি আর নানা বসে আছি দশ মিনিট যাবত,অথচ অন্যান্য যাত্রী উঠার নামে কোন খবর নাই।সময় চলে যাচ্ছে গাড়ীতেই নানা নাতি।ভয়ে গাড়ী থেকে নামছিওনা, লোকমূখে শুনেছি গাবতলীতে নাকি অনেক বখাটে ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা। যাইহোক অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর যাত্রীরা গাড়ীতে উঠতে শুরু করেছে।কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো যে লোকটা আমাদের টিকেট দিলো সেই লোকটিকে কোথাও দেখলামনা। আরেক কন্ট্রাক্টর এর দেখা পেলাম,তিনি নানাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনারা নাটোর যাবেন নাকি রাজশাহী যাবেন,নানা আমাদের গন্তব্যের কথা জানালেন।লোকটি টিকেট দেখাতে বললো,টিকেট তার হাতে দেয়া মাত্রই সে বললো এটাতো আমাদের গাড়ীর টিকেট না।কোথা থেকে নিয়েছেন এটা প্রশ্ন লোকটার।নানা সবকিছু খুলে বললেন।লোকটা এসময় নানাকে বললো কাকা আপনারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আপনারা ঠকবাজের পাল্লায় পড়েছেন।আমাদের কাউন্টার থেকে টিকেট নিলে কোন সমস্যা হতোনা। যাইহোক আপনারা যেহেতু প্রতারিত হয়েছেন, সেহেতু আপনাদের কম টাকা ভাড়ায় রাজশাহী শহরে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলো কন্ট্রাক্টর। পাঁচশ টাকায় আবারো টিকেট ক্রয় করতে হলো আমাদের। প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে নানা অনেক সময় ধরে মন খারাপ করে রেখেছেন।আমি বলেছিলাম আগেই এমন একটা কিছু হবে বলতেই নানা আমাকে গরম চেহারায় রাগ দেখালেন। গাড়ী চললো তার আপন গতিতে। নানা নাতি নিরব,কথা বন্ধ। ঘন্টা খানেক যাবত নানার চুপ থাকা দেখে আমি মুচকি মুচকি হাসছি।এমন সময় নানা বললেন এই শালা হাসিস কেন। প্রশ্নের উত্তরে বললাম তোমার মতো এমন চতুর চালাক মানুষ কীভাবে ধোঁকায় পড়েছো দেখছোনি,এখন থেকে মাঝে মধ্যে নাতির কথাও শুনিও।যাইহোক বিকাল গড়িয়ে এখন রাত গাড়ী ছুটে চলেছে গতিতে। রাত ১০.টায় বনলতা সেন এর দেশ নাটোর পৌছে গেলাম। স্টপেজ দিলো ১৫ মিনিটের জন্য।হালকা নাস্তা সেরে রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছি এমন সময় তাকিয়ে দেখি নাটোরের বিখ্যাত রসগোল্লা,কাঁচাগোল্লা বলে ডাকছে হকারেরা।আসেন খেয়ে যান নিয়ে যান নাটোরের বিখ্যাত রসগোল্লা ও কাঁচাগোল্লা বলে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তারা। গামলায় সাজানো চমৎকার ভাবে লোভনীয় সকল মিষ্টান্ন। মূহুর্তেই মনে পড়ে গেল প্রাইমারী স্কুলে পড়া পাঠ্যবইয়ের কথা।সেখানে পড়েছিলাম নাটোরের বিখ্যাত ওই সকল মিষ্টান্নের কথা। কাঁচাগোল্লার একপ্যাকেট ক্রয় করে গাড়ীতে আবারও উঠে পড়লাম। হু হু করে চলছে আমাদের গাড়ী। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেছে বাস এখনও গন্তব্যে পৌঁছায়নি। এরই মধ্যে দু-চোখে তন্দ্রা আসে, কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারিনি। যাইহোক রাত ১.৩০ মিনিট কন্ট্রাক্টরের ডাকে ঘুম ভাঙলো। রাজশাহী শহরে আমাদের নামিয়ে দিলো বাস। অপরিচিত জায়গা রাস্তাঘাট কিছুই চিনিনা আমরা।এক পানবিঁড়ি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা এটা কি রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ।লোকটি এসময় বললো না এটা রাজশাহী শহর,এখান থেকে আরো ৩৫ কিঃ মিঃ দূর ওই জায়গা।এখানেও প্রতারিত হলাম।বাস কন্ট্রাক্টর বলেছিলো চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমাদের পৌঁছে দেবে,অথচ ওই বাস ওখানে যাবেনা। যাইহোক কপালে লিখন ছিলো এগুলো আমাদের সাথে ঘটবে। দোকানদারকে আবারও জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে আমাদের গন্তব্যে যাওয়ার কি বাস পাবো। নাহ.. এসময় বাস নাও পেতে পারেন বলে উত্তর দিলো দোকানদার।রাস্তার পাশে ব্যাগ কাদে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বৃদ্ধ নানাকে নিয়ে।কিছুক্ষণ পর হানিফ নামে একটি স্পেশাল বাস আসছে দেখে সিগনাল দিতেই বাস কন্ট্রাক্টর আমাদের হাত ধরে গাড়ীর ভেতরে তুলে নিলো।আমরা আমাদের গন্তব্যে যাওয়ার কথা জানালে ৩০ মিনিটের মধ্যে বাসটি আমাদের নবাবগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌছে দিলো। অবশ্য এরজন্য দুইশত টাকা বাস ভাড়া আমাদের গুনতে হলো।এখান থেকে মহানন্দা নদী পেরিয়ে এবার যাবো আমরা নশিপুর গ্রাম।সেখানেই আমার ছোট খালার বাড়ী।

রাত ২.২০ বাজে, এখন আর ওইগ্রামে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বললো বাস কাউন্টারের এক পাহারাদার। সকালে এখান থেকে নদীপাড় পর্যন্ত নশিমন গাড়ী পাওয়া যায়।সেখান থেকে ডিঙি করে নদী পার হবো।কাউন্টারে বসে আছি,নানা তাজবী পড়ছেন,খাওয়া দাওয়ারও কোন ব্যবস্থা নেই।সাথে থাকা শুকনো খাবারও শেষ। পেট বেটা ক্ষিদের জালায় বড্ড লাফালাফি করছে।অপরদিকে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।একেতো পেটে ক্ষিদে,তারউপর মশার কামড়ে জীবণ জালাপালা।বিষয়টি আচ করতে পেরে নানা আমাকে শান্তনা দিয়ে বলেন রাত পোহাতে এখনও অনেক দেরি,কি আর করার,সকালে নাস্তা করাইমু তোমারে, এখন আপাদত জল খাও। বিঃ দ্রঃ-পাঠকের ভালো লাগলে গল্পের বাকী অংশ পোস্ট করা হবে।