দেশজুড়ে

“আইন যেখানে ন্যায়ের শাসক, সত্য বলিলে বন্দী হই” অত্যাচারিত হয়েও, অথচ বলিতে পারিনা অত্যাচার।”

প্রিন্ট করুন

উপরের বাক্যটির মধ্য দিয়ে আইনের প্রতি কবির বিরুপ মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।আইনের দ্বারা ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও,মানুষের সত্য ভাষণের অধিকারকে ঘুরপথে কেড়ে নেওয়াই হলো কিছু আইনি কর্তাদের কাজ । এবং সত্য ভাষণের পরিণতি সেখানে শাস্তি। তাইতো,ক্ষেত্র বিশেষ আইন কার্য্যত পরিণত হয় এক ধরনের তামাশায়।

গত ৩০শে নভেম্বর ২০২১ তারিখে আজমিরীগঞ্জের জলসুখা ইউনিয়নের স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচন চলাকালীন প্রশাসনের বেন্দা বাহিনী কর্তৃক নৌকার কর্মী সমর্থকদেরকে দৌঁড়ানি আর হয়রাণী ও মারপিটের কথা শুনেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আশঙ্কায় ছিলাম। বাস্তবে তাহাই ঘটলো।অদ্য জেলা প্রশাসকের বরাবরে এ্যাডভোকেট শিখা ম্যাডামের অভিযোগের বার্তাটি দেখে আরো শিউর হলাম।

এই অভিযোগের ফলাফল কি হবে ? তাহা জানিনা। তবে, একটা বিষয় আমি পরিষ্কার যে, বর্তমান বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনী যুদ্ধে শুধু সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত হলেই চলবেনা। তার সঙ্গে অবশ্যই নৌকার প্রার্থীর প্রতি প্রশাসনের মৌন সমর্থন থাকতে হবে। প্রশাসনের সমর্থন কেউ নেন টাকার জুড়ে, কেউবা পেয়ে থাকেন উপর মহলের ঠেলার জুড়ে। কিন্তু উপর মহলের ঠেলা-ধাক্কার সহযোগিতা পেতে হলেও, যায়গা মতো মোটা অঙ্কের নগদ নারায়ণের প্রসাদ ঢালতে হয়। আমাদের প্রার্থীর দূর্ভাগ্য যে, তেনার নগদ নারায়ণের জোড় নেই।

প্রশাসনের অন্যতম কর্মকর্তা “গোলাম কিবরিয়া”-সাহেবের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট শিখা ম্যাডামের আনিত অভিযোগটি প্রশাসন কতটুকু আমলে নিবেন ? কিংবা কেমন এ্যাকশানে যাবেন ? তাহা বলা মুশকিল। কারণ এই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মহান আশির্বাদের কৃপায় আমরা আওয়ামীলীগ সরকার দীর্ঘদিন যাবত একতরফা ক্ষমতায় আছি। অন্যতায় বিএনপি জামাতের মাইরের ছুঁটে দলের অনেক নেতাদেরকে আজ স্বদেশের বাহিরে ও দেশের কারাগাড়ে জীবন-যাপন করতে হতো। অন্যদিকে দেশটার অবস্থা কি হতো ? তাহা আল্লাহ্ মালিকই ভাল জানেন। দিনের শীল আগের রাতে মেরে হলেও, এদেশে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প এখনো তৈরী হয়নি।

নব্বই দশকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার এক ছেলে ইংরেজী রচনা ও ইংরেজী লম্বা লম্বা পড়া মুখস্থ করতে অক্ষম ছিলো বিধায় বার বার দুইবার মেট্রিকে ফেইল করেছিলো।সাধারণ ভাবে নকল করতেও বিশাল বাঁধা ছিল। তাই প্লাস্টিকের বলপেনের মাঝে লিখে সে অত্যাধুনিক নকল আবিষ্কার করে নিজে কৃতকার্য্য হয়েছিল, পাশাপাশি এলাকার অনেক ছাত্রকে সাহায্য করে সেদিন তার ফেইল করা নাম দূর করতে সে অন্যদেরও সহায়ক হয়েছিল। কিন্ত তার শিক্ষা সনদে নকলে পাশ লিখা ছিলনা। এরই নাম বাংলাদেশ। এদেশে জয় করাটা আসল। পাশের মাধ্যমটা বড় বিষয় নয়। সেই খবর কেউ রাখেনা।

বিদ্রোহী প্রার্থী খেলু মিয়া শুধু প্রভাবশালী নয়, পাশাপাশি সে একজন অর্থশালী । এবং তার পিতার মতো তার কলিজাটাও অনেক বড় বলিয়া জানি। কিন্তু তিনি সত্যি সত্যিই প্রশাসনকে টাকা দিয়ে হাত করেছেন ? কি না ? তাহা বলা মুশকিল। তবে, তবে সত্যি সত্যিই যদি তিনি টাকা দিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন ? তাহা আমার দৃষ্টিতে অপরাধের কিছু নয়। কারণ বর্তমান বাংলাদেশে নির্বাচন হলো একটা গেইম খেলা মাত্র। এই খেলায়, কে কিভাবে ? কিংবা কোন্ কৌশল অবলম্বন করিয়া বিজয় চিনিয়ে আনবেন ? তাহা মূল বিষয় নয়, খেলায় জয় চিনিয়ে আনাটাই মূল বিষয়।

পুলিশ পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া সাহেবের উপরে শিখা ম্যাডামের আনিত অভিযোগ ও ভোট পূর্ণ গণনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝা যায় যে, জলসুখার নির্বাচনী গেইম এখনো অভার হয়নি। গেইম যেহেতু অভার হয়নি, তাই নৌকার একজন সমর্থক হিসেবে উনার পাশে ছিলাম, এখনো আছি। আমরা বাঙালি জাতি, অস্ত্র ছাড়া এবং উপস্থিতি ছাড়াও যুদ্ধ করতে জানি।

আমরা বাঙালি জাতি,বীরের জাতি । ১৯৭১ সালে আমরা খাইছি থাকছি কলিকাতায়,আর যুদ্ধ করছি পূর্ব বাংলায়। গুল্লি মারছি পাকিস্তানে,লাশ পড়ছে কবরস্থানে ।একদিকে এদেশের অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন অবহেলা আর অবজ্ঞার শিকার,অপরদিকে ১৯৭১ সালে অনেকের মা বাবার বিয়ে হয়নি, তবুও আজ সেই ১৯৭১ সালের পরে জন্ম নেয়া বীর সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধের সনদ সমেত বহাল তবিয়তে আছেন। মেট্রিক পাশ না করলেও, মাজারে মাজারে আর বাজারে বাজারে গান গাওরী এমপি মমতাজ আপার মতো ডক্টরেট ডিগ্রী সম্বলিত পন্ডিতের অভাব নেই এদেশে।

জলসুখা ইউনিয়নের প্রকৃত আওমীলীগার মাসুক হাজ্বী সাহেবের ছেলে তাপস খান, আলী আজম সাহেবের ছেলে কামাল হোসেন,ও জনাব মালেক মেম্বারের ছেলে মতিউর রহমান এবং মাধবপাশার মাসুদ সাহেব সহ অনেক আওয়ামী প্রবীণ সৈনিক ও আওয়ামী সন্তানেরা আজ আওয়ামীলীগের সুদিনের সুবিধার মিষ্টি হাওয়ার বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও, এখন জলসুখা গ্রামের আকাশে-বাতাশে আওয়ামীলীগের ব্যালটহীন জয়-জয়-গান। এমপি মজিদ খান জলসুখা গ্রামে আগমন করিলে উনার মিছিলে লোকের অভাব হয়না। অথচ ভোটের ঘরে ঢুকলে আমরা কিছু লোকে গোষ্ঠীর মার্কা ব্যতীত অন্যকিছু বুঝিনা। তবে, নগদ নারায়ণের প্রসাদ কিংবা ব্যক্তি স্বার্থের কারণে আমাদের মার্কা বদলাতেও সময় লাগেনা।

১৯৭১ সালে আমরা অনেকের মুরুব্বীরা স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানে থাকলেও, আমরাই আজ মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের দলের অন্যতম মুজিব-যোদ্ধা। এলাকার প্রভাব বিস্তার ও মনের বিপরিতে প্রার্থী হলে, আমরা নৌকায় শুধু কুড়াল মারিনা, পারলে আগুন জ্বালাইয়া নৌকাকে ছাঁই করতে পারি। নব্য আওয়ামীলীগকে নিয়ে নাচতে জানি, কিন্তু জগৎজ্যোতির পরিবারের খবর নিতে আমাদের সকলের সময় হয়না।

দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েও, শাহজাহান মিয়া আর গাজীউর রহমানের সেন্টারে নৌকার বিজয় নিশান উড়েছে। অপরদিকে শাহরিয়া চৌধুরী সুমন আর রাহুল খান নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও, তাদের সেন্টারেও নৌকা প্রতীক সম্মানিত হয়েছে। অথচ তাদেরই সহযোদ্ধা ও দলের পদবী ওয়ালাদের কেউ কেউ নৌকাকে ডুবানোর জন্য নগদ নারায়ণের প্রসাদ বন্টন করেছেন। নৌকার বিজয় মিছিলে যাদেরকে সামন ভাগে দেখার কথা ছিল। কিন্তু ৩০ নভেম্বরের পরে চুপি চুপি কেউ কেউ মাইরের ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন।

শিখা ম্যাডামের ভ্রাতুষ্পুত্র জিলানে নির্বাচনের আগের দিন ভালো একজোড়া জুতা কিনেছিল নৌকার বিজয় মিছিল নিয়ে সবার আগে দৌঁড়ে আনন্দ করার জন্য, কিন্তু এক মহান পুলিশ সাহেবের ধমক খেয়ে ও ১৩ ভোটে নৌকা ডুবার কথা শুনে সে স্ট্রোক করে এখন সিলেট শহরের একটি হাসপাতালের বাসিন্দা হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জায় লড়ছে।

এরশাদ সরকারের আমলে যারা আপাই লাঙ্গল, আপাই লাঙ্গল বলিয়া গলা ফাঁটাই মিছিল করতেন। তাদেরই মাঝেই অন্যতম এক চাচায় ১৯৯৬ সালের উপ-নির্বাচনে তাঁর কেন্দ্রের আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী কিংবা উক্ত এলাকার জনগণের সাথে কোনো শলা-পরামর্শের তোয়াক্ষা না করে বলেছিলেন যে,”আমি আমার কেন্দ্রে নৌকাকে নিরান্নব্বই পার্সেন্ট ভোট দিব।” সেদিন নৌকার সমর্থনেরা মিলে চাচার নিরান্নব্বই পার্সেন্টের বিপরিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। ভোটের গণনায় আমাদের সুরঞ্জিত সেনবাবু নৌকা প্রতীকে মাত্র ৮১ খানা ভোট পেয়ে মুখব্যাঙ্গ করিয়া চাচাকে সীমাহীন ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন যে, “ তোমার নিরান্নব্বই পার্সন্টের কথা আমার আমৃত্য মনে থাকবে।”

যাইহোক, গেজেট প্রকাশের পূর্ব মহুর্ত পর্যন্ত শিখা ম্যাডামের নির্বাচনী খেলার গেইম যতক্ষণ শেষ না হয়, ততক্ষণ সহযোগি হিসেবে শিখা ম্যাডামকে যত প্রকার সহযোগিতা করা দরকার, ইনশাল্লাহ্ করে যাবো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনে লম্বা আওয়াজ দিয়ে জানিয়েছেন যে, “নির্বাচনী গেইমের অবশিষ্ট মহুর্তে শিখা ম্যাডামের যদি মোটা অঙ্কের আর্থিক সহযোগিতা লাগে ? সেই প্রায় অর্ধকোটি টাকার তহবিলও না কি তৈরী রয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর একজন শুভাকাঙ্কী হিসেবে নৌকা মার্কার শেষ খেলার অর্থ তহবিলে অংশ গ্রহন করতে পারলে, নিজেকে ধন্য মনে করতাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়তো হবেনা।

তবে, শেষ খেলাতেও, খেলু মিয়ার কাছে শিখা ম্যাডাম হেরে গেলে, খেলু মিয়াকে আবারো অভিনন্দন জানাতে কালক্ষেপণ করিবনা। নিজের জয়ের ও নিজের পছন্দের লোকের জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি। পারিনা শুধু নিরপেক্ষ চিন্তা, শুধু পারিনা এলাকার কল্যাণ কামনা করতে। পারিনা শুধু একজন সঠিক ও সহি লোককে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করতে। তবুও, কামনা করি ভাল থাকুক মাতৃভূমি, ভাল থাকুক প্রিয় জলসুখাবাসী।

—— কাউসার সমীর
সুদূর প্রবাস আমেরিকা থেকে।
॥ ৩রা ডিসেম্বর ২০২১ ॥


এই বিভাগের সর্বশেষ

Back to top button
Close