শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

রাখালের কাজ করে জীবন চলে বিধবা রমজান বিবির, মেলেনি কোন সরকারি সহায়তা

প্রকাশিত হয়েছে -

আকিব শাহরিয়ার, লাখাই প্রতিনিধি।

রাখালের কাজ করে কোনরকমে জীবন যাপন করা সত্বেও বিধবা রমজান বিবির ভাগ্যে জুটেনি কোন সরকারী সহায়তা।
লাখাই উপজেলার মোড়াকরি ইউনিয়নের মোড়াকরি গ্রামের ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী রমজান বিবি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ জীবন-জীবিকার তাগিদে রাখালের কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াহেদ আলীর সাথে বিয়ের পরপর দুইটি ছেলে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সংসারের অভাব অনটন জড়িয়ে পড়েন। অভাবের তাড়নায় গ্রামের কৃষকদের গরু রাখালের কাজ শুরু করেন তিনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে রমজান বিবি গ্রামের বিভিন্ন কৃষকের ৫০ থেকে ৬০ টি গরু প্রতিদিন সকাল আটটার দিকে গ্রামের পশ্চিম পাশে তিন চার কিলোমিটার দূরের বড়চর মাঠে নিয়ে যায় এবং সারাদিন রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিকেলবেলা কৃষকদের বাড়িতে পৌছে দেয়। বিনিময়ে যা পায় তা দিয়ে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ইতিমধ্যে তার দুই ছেলে বিয়ে করে যার যার মতো আলাদাভাবে সংসার চালাচ্ছে। বছর সাতেক পূর্বে তার স্বামী মারা গেলে সে অথৈজলে পড়েন। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেরাও তার কোন প্রকার সহযোগীতা না করায় অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও রাখালের কাজটি ছাড়তে পারেননি।

রমজান বিবির সাথে আলাপকালে জানান, স্বামীর আয় রোজগার তেমন ছিল না। সংসারে অভাব ও অনটন লেগেই থাকতো। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের সচ্ছলতা আনতে এ কাজে জড়িয়ে যাই এবং অদ্যাবধি আছি। প্রায় ২৫/৩০ বছর যাবৎ এ কাজে আছি। বর্তমানে শরীর তেমন ভাল নেই, বয়স হয়েছে। তার পরও এ কাজটি ছেড়ে দেইনি কারণ এটি ছেড়ে দিলেও অন্য কোন কাজ করতে হবে। কাজ না করলে সংসার চলবে কিভাবে। প্রতিদিন বাড়ী থেকে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গরুর পাল নিয়ে সারাদিন মাঠে থাকি বিকেলে ফিরে আসি। রোদ,বৃষ্টি ও খরা গা সয়ে গেছে। এ পর্যন্ত কোন সরকারী সহযোগীতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জানান এখনও পাইনি। তিনি আরও জানান, আমার কোন ঘরও নেই। বড় ছেলের ঘরে থাকি। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটায় এক শতাংশ বাড়ি থাকলেও ঘর নেই। বড় ছেলে খোজ খবর নেয় তবে তার সন্তানাদি বেশী বিধায় তেমন কিছু করতে পারেনা। রমজান বিবির বড়ছেলে কাউছার মিয়া জানান, মায়ের বয়স প্রায় ৬০ বছরের বেশী। তার পরও এ কাজ করে যাচ্ছে। আগামী বছর থেকে আর এ কাজ করতে দিব না।
এ ব্যাপারে মোড়াকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মোল্লা ফয়সাল জানান, রমজান বিবি কোন প্রকার ভাতা পায় কিনা তা আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোজঁ নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং জানান, লাখাই উপজেলার কোন মহিলা এমন কাজ করে তা আমার জানা নেই। সে যেন বিধবা ভাতা পায় সে ব্যাবস্থা করছি।