দেশজুড়ে

বানিয়াচংয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হকের বিরুদ্ধে শশ্মান ও বিল দখলের অভিযোগ

প্রিন্ট করুন

হবিগঞ্জের সংবাদ ডেস্ক ।

বানিয়াচং উপজেলার ১৩নং মন্দরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হকের বিরুদ্ধে এবার হিন্দু ধর্মাবলম্ভীদের শশ্মান দখল করে জমি বানানোর অভিযোগ উঠেছে। শুধু শশ্মানঘাটই নয়, শশ্মানের পাশে সরকারি চিতলিয়া বিল দখলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ইউনিয়নের রাজানগরসহ আশপাশের হিন্দু ধর্মাবলম্ভী গ্রামবাসীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে, বিলদখল মুক্ত করার জন্য স্থানীয় গীতা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি চন্দ্র কুমার দাস জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গতকাল সরেজমিনে রাজানগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পাশেই চিতলিয়া বিল জলমহাল। ওই বিলের পাড়ের একটি অংশে শত শত বছর ধরে শশ্মান হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। শুকনো মওসুমে গ্রামের কেউ মারা গেলে সেখানেই গ্রামবাসীরা তাকে

দাহ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, শশ্মানের পাশ থেকে চিতলিয়া বিল জলমহালের জায়গা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক তার জমির সাথে একত্রিত করে দখল করে রেখেছেন। ওই জায়গা প্রতি বছর তিনি অবৈধ বাঁশের ফাটি দিয়ে বাধ লীজ নিয়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আত্মসাত করছেন। এতে সরকারের লীজদাতা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বছর বিল লীজদাতারা ১৪ থেকে ১৫ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিলের লীজদাতা চন্দ্র কুমার দাশ জানান, সরকারের সকল প্রকার নিয়ম মেনে আমরা বানিয়াচং উপজেলার আগুয়া মৌজার ৯০, ৭৫৪, ১৮৬৭, ৬৬, ৯৫৩ ও ৫০৪ নং দাগের মোট ৮৫.৩৬ একরের বিলটি প্রতি বছর লীজ নেই। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক প্রভাব বিস্তার অবৈধ ভাবে বিলের পাড়ে তার জমিনের সাথে বিলের বেশ কিছু অংশ দখল করে রেখেছেন। আমরা নিরীহ লীজদাতারা এ প্রতিবাদ করলে তিনি আমাদেরকে তার লোকজনদের দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছেন। সম্প্রতিকালে ওই বিলের পাড়ের ওপর দিয়ে এক্সভেটর দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। রাস্তা নির্মাণের এক্সভেটর দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক রাজানগর গ্রামের শত বছরের শশ্মানঘাটের জায়গা মাটি কেটে জমি তৈরী করেন। এখন গ্রামের লোকজন মারা গেলে তাদের দাহ করার মত আর কোন জায়গা নেই।

তিনি বলেন- গ্রামের শশ্মানঘাটের জায়গা ও বিলের অবৈধ দখল মুক্ত করতে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।

এ ব্যাপারে দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা শত বছরের সাবেক মেম্বার ক্ষিরমোহন দাস জানান, আমি জন্মের পর থেকে দেখেছি, রাজানগর গ্রামের কোন লোকজন মারা গেলে ওই জায়গায় দাহ করে আসছেন। কিন্তু ওই শশ্মানের জায়গাটি শেখ শামছুল হকের কবল থেকে রক্ষা ফেল না। তিনি দখল করে সেখানে জমি তৈরী করলেন। আমরা পূর্ণরায় ওই জায়গাতে শশ্মান তৈরী করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি। অন্যথায় হিন্দু ধর্মালম্ভীরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নিবেন

একই গ্রামের বাসিন্দা ও গীতা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক সাগর চন্দ্র দাস জানান, আমাদের লীজকৃত বিলটি অংশ যে ভাবে তিনি দখল করেছেন এবার সেই ভাবে শশ্মানের জায়গা দখল করেছেন। আমরা বিলটি দখল মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে ইতিপূর্বে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসন এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করেছেন।

ইদানিং আমার ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের শশ্মানঘাট দখল করেছেন। এখন আমাদের গ্রামে কেউ মারা গেলে আমরা কোথায় দাহ করবো।

মন্দরী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ব্রজলাল দাস জানান, অভিযুক্ত জায়গা যে শশ্মান ছিল তা সত্য। কিন্তু ওই জায়গায় এখন জমি তৈরী করা হয়েছে।

এছাড়াও গ্রামের রনধীর দাস, অনিল দাস, মহর চাঁন দাস, জয় কুমার দাস, বিমল দাস, অসিত লাল দাস, বিরেন্দ্র চন্দ্র দাসসহ অনেকেই শশ্মান দখলের অভিযোগ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক তার বিরুদ্ধে শশ্মানঘাট, বিলের জয়গা দখলের আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন- আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মন্দরী ইউনিয়নের উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা সুজিত চন্দ্র দেব জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সরকারি বিলের জায়গা দখল, জায়গা থেকে মাটি উত্তোলনের করে জমি বানানো সত্যতা পেয়েছি।

এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।


Related Articles

Back to top button
Close