তোমাকে নীরা বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে পর্ব- ০৩ সাজ্জাদ বিন লাল

বাহ! সত্যিই আমার প্রিয় রঙ নীল। তোমার সঙ্গে কি মিথ্যা কথা বলতে পারি কবি? পারি না তো। তাও আবার প্রিয় রঙ নিয়ে। আসলেই আমার প্রিয় রঙ নীল।
আমারও।
তাই বুঝি কবি?
হ্যাঁ নীলা। সুন্দর মিলে গেল তাই না? নীলা কি পড়ে আছো এখন?
বলবো না।
রহস্য করো না।
প্লিজ বলো। শাড়ি না নিশ্চয়ই?
শাড়িই পড়ে আছি কবি।
সত্যিই! কি রঙের শাড়ি? নীল নাকি আকাশি। আমাকে বলো না।
কবি সত্যি বলছি নীল রঙের শাড়ি পরে আছি। তবে ভেবো না কোথাও যাবার জন্য। শাড়িটা খুব দামীও নয়। জাস্ট পরার জন্য পরা।
তোমার ভাবনার আকাশের সাথে মিলে গেছে বলতে পারো।
দারুণ তো! কপালে টিপ পরেছো নীলা?
হ্যাঁ।
নিশ্চই নীলার কপালে নীল টিপ?
না তবি। আমি পরোছি লাল টিপ। লাল টিপ আমার ভীষণ প্রিয়। নীলা, একদিন তোমার কপালে লাল টিপ পরিয়ে দেবো।
না কবি না, পারবে না।
আবারও না! আর না করো না নীলা। সামনে বসন্ত, বসন্তে দেখা দিও। বসন্তে নীল শাড়ি পরে এসো। তারপর তোমার কপালে লাল টিপ পরিয়ে দেবো। তোমাকে ছোঁব। তোমার স্পর্শ নিবো।
হবে না কবি। দেখাই দেববো না।
এমন সুন্দর বিকেলে না করো না নীলা।
আচ্ছা নীলা, তুমি নুপুর পরো?
একসময় পরতাম। আর এখন পরি না।
যখন দেখা হবে পরো। কিংবা না পরলেও আমি তোমার জন্য নুপুর নিয়ে আসবো। তোমার পায়ে নুপুর পরিয়ে দেবো।
কবি আমাকে নিয়ে এতো ভাবো তুমি?
কি করবো বলো, তুমি ছাড়া কেউ নেই তো আমার। তাইতো তোমাকেই সব সময় ভাবি। নীলা দখিনের জানালা হবে? আমি সেই জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো।
হবো নাহ্। আমি মেঘ হবো। মেঘ হয়ে অনেক দূরে হারিয়ে যাবো।
না নীলা না। আচ্ছা তুমি বসন্তের কোকিল হবে? এইবার না করো না। বসন্তের বিকেলে আদুরে গলায় কুহু-কুহু করে ডাকবে তুমি। আমি শুনবো আর মুগ্ধ হবো। তুমি আমাকে নিমন্ত্রণ জানাবে। বসন্তে ভালোবাসার নিমন্ত্রণ জানাবে। তারপর দু’জনে ভালোবাসবো দু’জন কে।
বসন্তের কোকিল হবো না কবি, আমার জীবন থেকে বসন্ত হারিয়ে গেছে। পরে তোমাকে সব বলবো।
গোলাপ হবে নীলা? নীল কিংবা লাল গোলাপ? গোলাপ হয়ে আমার জীনে সৌরভ ছড়াবে। গোলাপের গন্ধে পাগল হয়ে যাবো।
না কবি না, আমি ভয় পাই গোলাপ দেখে।
কেনো?
সবই বলবো কিন্তু আজ না। তুমি জানতে চেয়ো না। সময় হলেই বলবো।
তুমি কি হতে চাও নীলা?
আমি মেঘ হতে চাই। মেঘ হয়ে ভেসে যেতে চাই। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে।
কি এমন কষ্ট তোমার নীলা? আমাকে শেয়ার করো।
করবো তবে আজ নয়। যে দিন মন চাইবে সে দিন করবো। তোমার কোন কষ্ট আছে কবি?
আছে।
বলা যাবে?
যাবে তবে আজ নয়। কঠিন অসুখের সাথে বসবাস আমার নীলা। কথা দিলাম কাল বলবো। নীলা থাক না আমার কষ্টের কথা, দুঃখের কথা ভুলে যাই। আমরা পেছনে ফিরে না যাই। আমরা সামনে পথ চলি।
নীলা একটু আকাশে তাকাবে?
তাকালাম কবি।
কি দেখছো?
নীল আকাশ, চমৎকার নীল আকাশ। ওই রকম নীল মেঘ হয়ে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম!
না নীলা না। তুমি কোথাও যাবে না। তুমি থাকবে। তুমি আমার হবে। বসন্তে দেখা হবে তোমার সঙ্গে। বসন্তে নীল শাড়ি পড়ে আসবে। কটালে পরে আসবে লাল টিপ। তারপর তোমাকে ছোঁব।
পারবে না। আমি পালিয়ে যাবো। কেউ খুঁজে পাবে না আমাকে। কেউ না। জানো কবি, আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। শুধু তোমার কবিতা ছাড়া আমাকে কিছুই টানে না। তোমার কবিতা পরলে মন ভালো হয়ে যায়। তোমার কবিতা পড়লে বাঁচতে ইচ্ছে করে। কবে শুনবে তোমার নীলা মারা গেছে। নীলাকে আর পাবে না।
ওমন করে বলো না, তুমি মরতে পারো না। তুমি মরে গেলে আমিও মরে যাবো। অন্য কথা বলো নীলা, অন্য কিছু নিয়ে ভাবো।
কবি তুমি জানো না আমার গোপন দুঃখ। তুমি তো জানো না কবি আমার গোপন কষ্ট। এক আকাশ সমান কষ্ট আমার। যাও কথা দিলাম, হারিয়ে যাওয়া আগে সব দুঃখের কাহিনী বলে যাবো।
আমি চাইনা তুমি হারিয়ে যাও। সব কথা শুনবো, কিন্তু হারিয়ে যাওযার কথা বলো না না নীলা। তুমি হারিয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না।
কবি আমিও স্বপ্ন দেখতাম, আমারও সব ছিলো। কিন্তু এখন আর স্বপ্ন দেখি না, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। দিন গুনছি বিদায় নেওয়ার। তবে তোমার জন্য দুঃখ হয় কবি। তোমার মতো ভালো মনের একজন মানুষকে হারাবো।
না হারাবে না। আমি থাকবো তোমার কাছাকাছি।
কিন্তু আমি তো থাকছি না কবি। ক’দিন পর দেখবে আমি নেই। হয়তো বা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছি।
না নীলা না, আচ্ছা ক’দিন পর বসন্ত। প্লিজ বসন্তে দেখা দাও, তারপর যা করবার করো। যেখানে যেতে যেও। কিন্তু এই বসন্তে দেখা দাও। বসন্তে তোমাকে দেখবো। বসন্তে তোমাকে ছোঁব।
কবি রাখতে হবে।
আজই কথা বলবো, ভেবোনা আমি ফোন দেব তোমাকে। তোমাকে আজ আর ফোন করতে হবে না। সত্যি বলছি আজ আমিই ফোন করবো। এখন রাখছি। ওকে।
নীলা ফোন রেখে দেওয়ার পর আমি সাগরপানে তাকালাম। নীল আকাশের মত আজকে সাগরের ঢেউও নীল হয়ে আছে।
আহারে!! আমার নীলা যদি এখন থাকতো কত আনন্দই করতাম দু’জনে। আচ্ছা নীলার কি এমন দুঃখ, কি এমন কষ্ট নীলার? কেনো নীলা হারিয়ে যেতে চায়? না না, নীলা হারিয়ে যেতে পারে না।
নীলাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। সাগর পানে তাকিয়ে নীলার কথা ভাবতে ভাবতে আমার দুই চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরতে লাগলো।
বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, মন খারাপ করে সাগর পানে বনে আছি আর কত কি ভাবছি। সমস্ত ভাবনায় নীলা আর নীলা। কি এমন দুঃখ নীলার? কেনো নীলা পালিয়ে যেতে চায়? কেনো নীলা হারিয়ে যেতে চায়? নিশ্চয়ই নীলার বড় কোনো দুঃখ, কষ্ট রয়েছে যা কাউকে শেয়ার করতে চায় না।
না নীলা তা হতে পারে না। তুমি কোথাও হারিয়ে যেতে পারো না। তুমি থাকবে আমার কাছাকাছি। আমরা আগামি বসন্তে দেখা করবো। তুমি নীল শাড়ি পরে আসবে। কপালে পরে আসবে লাল টিপ। তারপর তোমাকে ছোঁব। নীলার কথা ভাবছি তখন ফোন বেজে উঠলো।
কবি কি করছো?
তোমার কথাই ভাবছিলাম। থ্যাংক্স নীলা।
থ্যাংক্স কেনো কবি?
ফোন করেছো বলে। বারে আমি বুঝি ফোন করতে পারি না, কখনো করিনি বুঝি?
করেছো, অবশ্যই করতে পারো। কিন্তু আজ খু্ব মনে পড়ছে তোমাকে।
বেশি বেশি মনে করার সাথে সাথে তোমার ফোন পেলাম। তাই থ্যাংক্স নীলা।
ওকে কবি।
নীলা সাগরের ঢেউ বেশি প্রিয় নাকি পাহাড় ছুঁয়ে যাওয়া মেঘ বেশি প্রিয়।
চলবে…………