শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বাহুবলে গলাকেটে মা মেয়েকে হত্যা আসামীর স্বীকারোক্তিসহ আটক ২

প্রকাশিত হয়েছে -


নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জের বাহুবলে টাকা চুরি করতে ব্যর্থ হয়ে মা- মেয়েকে গলাকেটে হত্যা করে পাষণ্ডরা। আসামীদ্বয়ের তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা চুরা, নগদ ৮শ ৫০ টাকা ও ভিকটিমের মোবাইল ফোন ডোবা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এঘটনায় শনিবার বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা বেগম এর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান আসামী আমীর আলী।

আসামীর বরাত দিয়ে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: আলমগির কবির জানান, ঘটনার আগের দিন প্রধান আসামী আমীর আলী ৩ হাজার টাকা হাওলাদ নেয় সনজিতের স্ত্রীর কাছ থেকে। টাকা বের করে দেয়ার সময় বড় অংকের টাকার বাণ্ডিল নজরে পরে আসামী আমির আলীর।

উল্লেখিত টাকার বান্ডিল দেখে লোভে পড়ে আমীর আলী। টাকা চুরি করতে আমীর আলী (৩২) তার বন্ধু মনির (৪৫)সহ ৩ জনকে নিমন্ত্রণ জানায়। তার নিমন্ত্রণ পেয়ে আমীর আলীর বাসায় বসে তিনজন পরামর্শ করে। পরামর্শ অনুযায়ী আমীর আলী তার ঘরে চুর ডুকছে বলে মিথ্যা কথা বলে নিহত অঞ্জলী দাশকে।

একপর্যায়ে নিহত অঞ্জলী দাশকে তার ঘর দেখে যেতে বলে এবং দরজা খুলতে বলে। দরজা খুলতেই আমীর আলীসহ সহযোগীরা ঘরে প্রবেশ করে ধস্তাধস্তি ও শোর চিৎকার করলে গলাকেটে হত্যা করে মা মেয়েকে। হত্যার পর, রাত সাড়ে ৩ টায় ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকরী আমীর আলী নিহত অঞ্জলী দাশের স্বামী সনজিত দাশকে ফোনে জানায়, বাসায় চুর ডুকছে জলদি আসতে হবে, চোরকে ধাওয়া করতে আমি আহত হয়েছি। তখন সনজিত দাশ ব্যবসার কাজে সুনামগঞ্জ ছিলেন।

পরে সনজিত দাশ ভোর সাড়ে ৬ টায় বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানের গলাকাটা লাশ দেখেন। পরে আশপাশের লোকজন ও পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে। এর পর থেকে আঘাতকরা পালিয়ে যায়।

গতকাল ১৯ মার্চ শুক্রবার বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে এসআই মোস্তাফিজুর রহমানসহ একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক প্রধান আসামী আমীর আলীকে আটক করেন। আটক আমীর আলী সিলেটের গোয়াইনঘাটের সালুটিকি এলাকার আলমগির হোসেনের ছেলে। আমীর বর্তমানে বাহুবল বিয়ে করে দ্বিগাম্বরে সনজিত সহ একই বাসার ভাড়েটে থাকেন। আমীরের দেয়া তথ্যমতে শনিবার বিকেলে মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। মনির হোসেন ঐ গ্রামের মৃত হবিব উল্লার ছেলে। এদের মধ্যে একজন পলাতক।

প্রসঙ্গত গত ১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোররাতে উপজেলার দ্বিগাম্বর বাজারে ব্যবসায়ী সনজিতের ভাড়াটে বাসায়, দৃবৃত্তরা গলাকেটে হত্যা করে মা মেয়েকে। নিহতরা – উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের লামাপুটিজুরী গ্রামের সনজিত দাসের স্ত্রী অঞ্জলী (৩০) ও তার মেয়ে পূজা রানী দাস (৮)। এ ঘটনায় পাশের রুমের ভাড়াটিয়া কতিথ অসুস্থ আমীর আলীকে প্রধান আসামী আমীর আলীকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন। খবর পেয়ে বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ আলামত সংগ্রহ করে লাশ উদ্ধার করেন। এবিষয়ে রাত সাড়ে ৮টায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ প্রেস বিফিং করেন এসময় উপস্থিত ছিলেন বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র এএসপি মো: পারভেজ আলম চৌধুরী, অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ওসি তদন্ত মো: আলমগির কবিরসহ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ।

বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, প্রধান আসামী আমীর আলী তার অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে। তার সহযোগী মনির হোসেনকে আগামীকাল আদালতে হাজির করা হবে। বাকী আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।