শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বানিয়াচংয়ে শিলাবৃষ্টির তান্ডবে ৫ ইউনিয়নের ১১১ হেক্টর বোরো জমির আবাদ বিনষ্ট ।। কৃষকের চোখে নীরব কান্না

প্রকাশিত হয়েছে -

মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার, বানিয়াচং থেকে। বানিয়াচং উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ১২টি ব্লকের বিভিন্ন হাওরে শিলাবৃষ্টির তান্ডবে বোরো জমির ধানগাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস ধান গবেষণা ইনিস্টিউটের মহা পরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি তালিকা তৈরি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সৃত্র জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার ১নং উত্তর পুর্ব ইউনিয়নের মজলিশ পুর,নন্দীপাড়া,কাজী মহল্লা ব্লকের বিভিন্ন হাওরে ১৫০১। ২নং পুর্ব পশ্চিম ইউনিয়নের আমিরখানী, শেখের মহল্লা ব্লকের ১৬২১, ৫ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের আড়িয়ামুগুর ব্লকের ২৭২০,৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের চমকপুর,লোহাজুরী ব্লকের ৩২৪৭,৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নের বড়ইউড়ি ব্লকের ২৫৬৫ এবং ৮ নং খাগাউড়া ইউনিয়নের গুনুই, সন্দলপুর ও খাগাউড়া ব্লকের ২৪৫০ ৫টি ইউনিয়নের ১২টি ব্লকের বিভিন্ন হাওরের মোট ১৪১১১ হেক্টর জমি আবাদের মধ্যে ১১১ হেক্টর শিলা বৃষ্টির তান্ডবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল সোমবার দিবাগত ভোর রাতে হঠাৎ শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় ২ ঘন্টা স্থায়ী ছিল এই শিলা বৃষ্টির। বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের শালা ও কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার উপর দিয়ে শিলা বৃষ্টি বয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ওই এলাকাগুলোর হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমি।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে- বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের হারুনী,ধনপুর,লোহাজুরী,বগী,বাতাকান্দী,চমকপুর,বাগাহাতা,মকা,হলিমপুরসহ ঐ এলাকার বিভিন্ন হাওরে শিলাবৃষ্টি তান্ডবের এবং উপজেলার আরও ছোট ছোট ২০টি হাওরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষকরা জানান, দীর্ঘ সময় নিয়ে শক্তিশালি শিলা বৃষ্টি হওয়ায় হাওরের বোরো জমিগুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এছাড়া অধিকাংশ বোরো জমির ধান গাছগুলোর গুড়াতে ভেঙে গেছে। যেগুলোতে আর ধান আসার সম্ভাবনাই নেই। এতে মাথায় হাত পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের। জমির এই পরিণতি দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষক ব্রজেন্দ্র দাশ বলেন, ‘অখনঅ (এখনও) জমিত ধান আইছে না। কিন্তু গতকাল রাত্রে পাথর পইরা (শিলা বৃষ্টিতে) সব গাছ নষ্ট হইয়া গেছেগা। কোন কোন জমির ধানগাছগুলো একবারে গুড়িত ভাইঙা শেষ। ইতাত আর ধান আইত না।’ একই গ্রামের কৃষক মতিলাল দাশ বলেন, ‘আমার জমি একবারেই নষ্ট হইয়া গেছেগা। এই জমির ধান দিয়া আমার জীবন চলে। পুলাপানরে লেখাপড়া করাই। অখন নিজেই কিতা খাইমু, পুলাপানরে কইতিক্কা লেখাপড়া করামু বুঝতেছি না।’
বদলপুর ইউনিয়নের কৃষক আহাদ আলী বলেন, ‘রাতে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। সাথে বড়বড় শিলা বৃষ্টিও শুরু হয়। সকালে হাওরে গিয়া দেখি জমিগুলো একেবারে মাটির সাথে মিশাইলাইছে। এই জমিগুলা থাইক্কা আর ধান পাওয়ার আশা নাই।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ এনামুল হক জানান, শিলাবৃষ্টির হয়েছে খবর শুনে আমাদের উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের মাঠে পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো জমির তালিকা সম্পন্ন করেছি এবং আমি নিজে উপজেলার ১০ সুবিদপুর, ১১নং মক্রমপুর এবং ১নং সুজাতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে পরিদর্শন করেছি। কিন্তু এই এলাকায় শিলার কোনো ক্ষয়ি হয়নি তবে সব চেয়ে বেশি কাগাপাশা ইউনিয়নে ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আজ মঙ্গলবার আমি কাগাপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরের পরিদর্শন করবো।