বৃহস্পতিবার , ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

শহীদ বুদ্ধিজীবী সায়ীদুল হাসানের জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিপ্লবী লাল সালাম

প্রকাশিত হয়েছে -

সায়ীদুল হাসান। একজন বামপন্থী নেতা, প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা, একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার লোক, একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী।

১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় বানিয়াচং গ্রামের কামালখানী মহল্লায় জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম খান বাহাদুর রফিকুল হাসান।

সায়ীদুল হাসান সিলেট থেকে মেট্রিক পাশ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

১৯৪৬ সালের ১৬ আগষ্ট কলকাতার ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে বাঁচিয়েছেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুরোধে সায়ীদুল হাসান লন্ডন ও শ্রীলংকার হাইকমিশনে ট্রেড কমিশনার পদে চাকুরী করেন। শ্রীলংকায় থাকাকালীন পুর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের খবর সংবাদে দেখে চাকুরী ছেড়ে দেন।

১৯৫৮ সালে ভাসানী ন্যাপে যোগদান করেন। ন্যাপের রাজনীতিতে মওলানার ভাসানীর একনিষ্ট সহচর হিসেবে কাজ করেন।

১৯৬৪ সালে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে তিনি বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেন।

১৯৬৬ সালে ন্যাপ ভাসানীর কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্ত্রী ফরিদা হাসানও ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ফরিদা হাসান ছায়ানটের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যও ছিলেন।

সায়ীদুল হাসানের বন্ধু ছিলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নির্মল চৌধুরী। নির্মল চৌধুরী সিলেটের একটি চা বাগানের মালিক ছিলেন। জামাল উদ্দিন নামে এক বিহারী লোক নির্মল চৌধুরীর ঘোর শত্রু ছিলেন।

১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নির্মল চৌধুরী দু’টি নাবালিকা কন্যাসহ ঢাকায় সায়ীদুল হাসানের বাসায় আশ্রয় নেন। চা বাগানের অবাঙালী কর্মচারীরা নির্মল চৌধুরীকে অনুসরণ করতে থাকেন। নির্মল চৌধুরীকে বিহারীরা ধরে নিয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ১৮ মে একটি মিথ্যা আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সায়ীদুল হাসান তাঁর বন্ধু নির্মল চৌধুরীকে উদ্ধারের জন্য ঢাকায় হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে (শেরাটন হোটেল) যান। সেই যে গেলেন সায়ীদুল হাসান আর বাসায় ফিরলেন না!

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ভারতীয় এক জেনারেলের সহযোগীতায় সায়ীদুল হাসানের স্ত্রী ফরিদা হাসান পাকিস্তানের লেঃ জেনারেল নিয়াজীর সাথে ঢাকা সেনানিবাসে দেখা করেন। জেনারেল নিয়াজী ফরিদা হাসানকে বললেন, পাকিস্তানের আই এস আই এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্নেল মাকসুদ ঢাকা লালমাটিয়া ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে নির্মল চৌধুরী, আর পি সাহার সাথে সায়ীদুল হাসানকে হত্যা করা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মানবহিতৈষী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, একজন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে খুন হয়ে গেলেন। বাংলাদেশ হারালো একজন বুদ্ধিজীবীকে।
দুঃখের বিষয় হলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসেও এই শহীদ বুদ্ধিজীবীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হচ্ছে না! স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কিংবা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তাঁর জন্মদিন ও নিখোঁজ হওয়ার দিনটিকে পালন করা হয়না। স্বাধীনতার পর হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের নামকরণ শহীদ বুদ্ধিজীবী সায়ীদুল হাসানের নামে করা হলেও বর্তমানে সড়কের কোথাও তাঁর নামে নামফলক নেই। তবে বানিয়াচং উপজেলা সদরের কামালখানী গ্রামে ব্র্যাকের উদ্যোগে তাঁর নামে একটি গণপাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
(এমদাদুল হোসেন খানের ওয়াল থেকে নেওয়া)