মঙ্গলবার , ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভালোবাসার নামে প্রতারণা

প্রকাশিত হয়েছে -


সাজ্জাদ বিন লাল।

কাল্পনীক কথা দিয়ে গল্প লেখার আবেগ-অনুভূতি, ইচ্ছা-আখাংঙ্খা, সাধনা-বাসনার সেই দিনই চলে গেছে যে দিন দেখলাম, মশা কয়েল কে সিগারেট মনে করছে। তাই সম্পূর্ণ বাস্তব চিত্র নিয়ে গল্প শুরু করলাম।

নবাগত মেয়ে মোহনা সবেমাত্র ক্লাসে প্রবেশ করেছে। সবাই তাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। নবম শ্রেণির ক্লাসে আজ নতুন বলে কার কাছে বসবে ভেবে পায় না। অবশেষে শেষ সিটে বসলো। দেখতে অনেক সুন্দরী ও ছিল, যাকে অনায়াসে বলা যায় অনেকের মধ্যে একজন।

প্রথম দিনেই ক্লাসে স্যারের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারে এমন এক ঝাঁক মেধাবী বন্ধু পেয়েছিলো। চলতে লাগলো তার দিন। অতিবাহিত হতে লাগলো সময়, পড়ালেখা ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা, হৈ-চৈ এ সব মিলিয়েই চললো দিনগুলি। হঠাৎ করে নতুন করে বন্ধু হবার প্রবল আগ্রহ নিয়ে হাত বাড়ায় রোহান। রোহান দশম শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্র। স্কুলে তার অনেক সুনাম রয়েছে বলে সবাই তাকে এক নামে চিনে।

তাই তার বাড়ানো হাত ফিরিয়ে না দিয়ে সে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। হলো তাদের সবার মধ্যে আরেক জন বন্ধু। এভাবে কেটে গেল একটি বছর। তবে মোহনা কোটিপতি বাবার প্রথম তনয়া। তার বাবার নাম ছিল সারা এলাকা জুড়ে খ্যাত। এলাকার মানুষ তার বাবাকে তাদের দেবতূল্য মনে করতো। কারণ এলাকার সবাইকে তিনি খুব ভালোবাসেন। সবার সুখে দুঃখে তিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেশির ভাগ থাকেন।

রোহান ছিল একটা বস্তিতে বড় হওয়া ছেলে, ঠিকমত পড়াশোনার খরচ চালানো ও তার পক্ষে সম্ভব হতো না। অধিকাংশ খরচ মোহনাকে বহন করতে হতো বন্ধু হিসেবে। একদিন রোহান মোহনাকে তার মনের গোপন প্রেমের কথা জানালো। মোহনা কি করবে ভেবে পায় না। কোন জবাব না দিয়ে চলে গেল বাড়িতে। কিছু দিন পর যখন রোহান কলেজে ভর্তি ফি যোগাড় করতে পারে নি এ খবর জানতে পেরে টাকা নিয়ে রোহানের কাছে হাজির হলো মোহনা।

রোহান টাকা নিতে চায় না, সে বলে যদি মোহনা তার কথা রাখে তবেই সে টাকা নেবে। ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রাজি হলো। কেননা রাজী না হলে রোহানের পড়ালেখা করতে পারবে না, আর এটা কোন মতে সহ্য করতে পারবে না। তবে মোহনা ও রোহানকে খুব পছন্দ করতা একজন ভালো বন্ধু হিসেবে। আর সর্বদা এমন একজন মেধাবী ছেলে তার জীবনে প্রয়োজন মনে করতো।

মনে সর্বদা ভয় এই ভেবে যে, রোহান হলো গরিব ঘরের সন্তান তাই তার বাবা সম্পর্ক টা মেনে নিবেন তার দৃঢ় বিশ্বাস। কারণ তারা বাবা চাইলে রোহানের মমত ৫/৭ ছেলে কিনে নিতে পারেন। তবুও হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। রোহান কে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তোলাই তার প্রয়োজন। মোহনা চায় রোহান তার বাবার সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করুক। কেননা তাকে হারাতে পারবে না। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো মোহনার কাছে রোহান।

রোহান একদিন বলেছিলো, মোহনা তোমার বাবা কোনদিন আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবেন না তাই চলো আমরা গোপনে বিয়ে করে নেই। আবেগের তাড়নায়, তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসায়, তাকে পাবার ইচ্ছায় দ্বিমত পোষণ না আমি রাজী হয় মোহনা। কেমন ভূত যে তার ঘাড়ে বসেছিল কে জানে।

কোর্টে বিয়ে হলো, বিয়ের খরচ টা ও সে যোগাড় করতে পারেনি। কাবিন হলো ৬০ হাজার টাকা। বিয়ের দিন রোহান বলেছিল মোহনা কোনদিন কারো বাড়িয়ে দেওয়া হাতকে বিশ্বাস করো না, কারণ এদের কারণেই অনেক দামী সম্পদ হারাতে হয়।

মোহনা চায় সে প্রতিষ্ঠিত হোক, এজন্য নানা বাহানা করে জমিয়ে রাখা প্রায় ৩ লক্ষ টাকা তার হাতে দিয়েছিল চাকরির সুবাধে। তার একটা সরকারি চাকরি হলো, তার পর থেকেই শুরু হয় মোহনার সাথে তার মান অভিমান। যত দিন যাচ্ছে ততই মোহনা তার কাছে অবহেলার পাত্র হিসেবে গণ্য হলো।

কিছু দিন পর সব কিছু অস্বীকার করে রোহান নতুন ভাবে বাঁচার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্নেহা নামে একটা মেয়েকে বিয়ে করলো। মোহনা তাকে তালাকনামা দিতে বললে সে তালাকনামা ও দিবে না বলে দিলো শুরু হলো রোহানের সুখের আর মোহনার দুঃখ দুর্দশার দিন।

রুমী ও সোহান প্রথম দিকে মোহনাকে বারণ করেছিল তার সাথে যেন সম্পর্কে না জড়ায়। তাদের কথায় তেমন কান দেয়নি মোহনা। এজন্য তারা ও মোহনার কাছ থেকে দূরে চলে গেল। আজ তার পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই। সে বড়ই নিঃস্ব।কারো কাছে বিষয় টা বলতে ও পারছে না।

আজ পরিবারের কাউকে বলতে পারছে না তার বাবা, মা ও ছোট দুই বোনের কথা ভেবে। মোহনা বলে যা হবার হয়েছে কিন্তু ছোট দুই বোন তাদের কি হবে, মোহনার বাবাকে সবাই দেবতূল্য মনে করে সমাজের কাছে তাঁর কোন মূল্য থাকবে না। নিজের কথাগুলো নিজের কাছে রাখতে হবে।

একদিন মোহনার স্কুলের বন্ধু অজয়, রুমী, সুহান সব জানতে পেরে সুহান বললো, মোহনা তুই যদি চাস তাহলে এর একটা বিহিত করতে পারি। কিভাবে? তাকে বুঝিয়ে বলবো যদি সে না মানে তাহলে অন্য ব্যবস্থা নেব। না, না সুহান না, এটা করো না। কারণ কেউ যদি তার গায়ে ফুলের আঘাত করে তা হলে আমি সহ্য করতে পারবো না। সে আমার না হোক তবে আমি অন্য কারো সংসার ভাঙতে চাই না।

তাহলে থানায় যাই? না, এ ও করা যাবে না। কারণ আমার সব কথা যদি আমার পরিবার জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবে দেখ তো? হে, তাও ঠিক। তাহলে এখন কি করতে পারি? কোন কিছু জানি না কি করবো। দুই বোন ও আমার দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে।

এক বোন এসএসসি পরিক্ষা দিবে আর এক বোন শাবিপ্রবি তে ইংরেজিতে চান্স পেয়েছে। তাই পরিবার থেকে বিয়ের জন্য প্রচুর চাপ দেওয়া হচ্ছে। কারণ আমার বিয়ে না হলে তো ছোট বোনদের কথা ভাবা যায় না।

আমার যে কত কষ্ট একমাত্র আমার বালিশ জানে। দীর্ঘ আট বছর ধরে আমার বালিশের কাভার ধুয়ে দেখিনি, চোখের পানিতে আমার বালিশ টা যেন কাঠ হয়ে গেছে। এমন ভাবে বালিশ টা দেখা যায় যেন বস্তিতে পড়ে থাকা নোংরা কোন একটা বালিশের ন্যায়।

এসব কিছু জানতে পেরেছিলাম মোহনার কাছে। আমি তার কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। মোহনা তার কথাগুলো বলছিলো আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছিলো, আমারও। এত পাষণ্ড ও পশুর ন্যায় মানুষ হতে পারে তা জানা ছিলো না। আমি মোহনার দিকে চেয়ে দেখলাম তার চোখের নীচে কালো দাগ পড়ে গেছে।

আমি মোহনাকে বললাম তার ঠিকানা বলো আমি তার প্রতিশোধ নেব। মোহনা বললো, না সাজ্জাদ অমন কথা বলো না। জানো, আমি প্রতিটি রাতের অধিকাংশ সময় কাটাই নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করে।